মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
কুয়াকাটা প্রতিনিধি॥ সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার শুটকি পল্লীতে শুটকি তৈরির মৌসুমে স্থানীয় দরিদ্র পরিবারগুলোর ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা কুড়িয়ে নেয় কিছু মাছ। ঘরে খাওয়ার কিছু না থাকলে, এই মাছই হয় তাদের খাদ্যের একমাত্র উপাদান। সাগরপাড়ের ছোট্ট কণ্যা সুমাইয়া।
আট বছর বয়সেই পরিবারের বড় হিসেবে ভাই-বোনের আবদার মেটাতে দায়িত্ব নেয় জীবিকার। তার ভাষায়, “ঘরে খাওয়ার কিছু নাই। ছোট ভাই-বোনেরা মাছ খাইতে চাইছে। তাই এখানে মাছ নিতে আইছি। এখান থেকে চিংড়ি মাছ নিলে মায়ে রান্না করবে।
ভাই-বোনরাসহ আমরা খামু।” সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার শুটকি পল্লীতে মাছ সংগ্রহের সময় কথাগুলো বলছিলো সুমাইয়া। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকার বাসিন্দা মোটরসাইকেল চালক মো. সলেমান মুন্সির মেয়ে সুমাইয়া। ১২২ নং কুয়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। সুমাইয়া জানায়, তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার বড়। লেখাপড়া করে সে-ই।
টাকার অভাবে অন্য ভাই-বোনেরা লেখাপড়া করে না। সব সময় তার বাবা বাজার করতে পারেন না। ঘরে যে সময় রান্না করার কিছু থাকে না, তখন শুটকি থেকে মাছ নেয় সে। শুধু সুমাইয়া নয়, সাগরপাড়ের অনেক শিশুই শুটকি পল্লীর বেঁচে যাওয়া মাছ কুড়িয়ে পরিবারে অন্নের যোগানে সহায়তা করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুল কাইউম বলেন, কুয়াকাটা শুটকি পল্লীতে বছরে ছয় মাস কাজ হয়। এই ছয়মাস স্থানীয় গরিব ছেলে-মেয়েরা এসে বিভিন্ন সময় মাছ কুড়িয়ে নেয়। এতে তাদের পরিবারের উপকার হয়। পৃথিবীতে সবাই সবার পাশে থাকলে সবারই ভালো হয় বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সবার মাছ খেতে ইচ্ছে হয়। টাকা নেই বলে ওরা মাছ খেতে পারবে না এটা হয়? এখানে শুটকি পল্লীর আড়ৎদাররা গরীব মানুষের পাঁশে দাড়াচ্ছেন এটাও ভালো। শুটকি পল্লীর আড়ৎদার মো. ফয়সাল বলেন, শুটকি করার জন্য সমুদ্র থেকে বিভিন্ন মাছ কিনে নিয়ে আসেন তারা।
সেখানে চিংড়ি মাছ থাকে। তাদের আড়ৎ এ চিংড়ির শুটকি হয় না। মাছ ধোয়ার সময়, স্থানীয় শিশুরা তাদের প্রয়োজনে মাছ টোকাইয়া নিয়ে যায়। ওরা চিংড়ি মাছ নিয়ে ওদের পরিবারের চাহিদা মেটায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছ থেকে ওরা মাছ নিয়ে রান্না করে খায়।
এটাও একটা তৃপ্তির বিষয়। এতে সবাই বাঁচি আমরা। এভাবেই জীবন-জীবিকার লড়াই নিরন্তর ছোট-বড় যুদ্ধ চলছেই মানুষের জীবনে। তাই সবাই সবার পাশে এসে সহায়তার হাত ধরবে-প্রত্যাশার সবার।
Leave a Reply